মৃত্যুকে স্মরণ করা পাপ থেকে বেঁচে থাকার ওষুধ

Daily Inqilab তাহমিনা আক্তার

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

জীবন হলো একটা নিদিষ্ট সময়ের সমষ্টি।প্রতিনিয়ত আমাদের হায়াতের দিন ফুরিয়েগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর দিকে আলোর গতিতে প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কি.মি. বেগে এগিয়ে চলছি আর অন্তিম সেই জীবনের নিকটবর্তী হচ্ছি। অথচ আমরা কত উদাসীন! আমরা দুনিয়ার মোহের পিছনে ছুটে চলি নিরন্তর। আমরা ভুলে যাই আমাদরে নির্দিষ্ট গন্তব্যের কথা।আমরা কখনো কি ভাবি প্রতিনিয়ত যে পথের দিকে নিরন্তর ছুটে চলছি সে পথের গন্তব্য কোথায়? পৃথিবীর রঙ-রসে মেতে মৃত্যুকে হয়তো ভুলে থাকা যায়, কিন্তু মৃত্যুকে এড়ানো বা মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচা যায় না। অথচ আমাদের সোনালি প্রজন্মের মানুষগুলো মৃত্যুকেই জীবনের লক্ষ্য বানাতেন। মৃত্যুর জন্য প্রস্ততি নেওয়াই ছিল জীবনের চরম উদ্দেশ্য। আমরা দুনিয়ার সবকিছুর জন্যই আমরা প্রস্তুুতি নিই। চাকরি,বিয়ে, ক্যারিয়ার এমনি নিত্য দিনের বাজার-সদাই করার জন্যও আমাদের একটা প্রস্তুতি থাকে কিন্তু প্রস্তুতি নেই কেবল মৃত্যুর জন্য!

সন্ধ্যায় বেচে আছি পরের দিনটা দেখতে পারবো কিনা সেটার কোনো নিশ্চয়তা নাই। আবার সকালে জীবিত আছি এমন লোক যে সন্ধ্যা অবধি বেচে থাকবে সেটাও অনিশ্চিত।এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) বলেছেন, ‘যখন সন্ধ্যা উপনীত হয় তখন সকালের জন্য অপেক্ষা করো না।আর সকাল উপনীত হলে সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষায় থেকো না। তোমার সুস্থতা থেকে কিছু সময় তোমার অসুস্হতার জন্য বরাদ্দ রাখো এবং সময় থাকতে মৃত্যুর জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে নাও।’ (সহিহ বুখারি : ৬৪১৬)। বাড়ী-গাড়ী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, ভক্তকুল সবাইকে রেখে সবকিছু ছেড়ে কেবল এক টুকরো কাফনের কাপড় সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করতে হবে। বিলাসিতায় কাটানো সুন্দর দেহটা পোকার খোরাক হবে। জীবনের সকল আশা ও আকাংখা মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। সকল হাসি সেদিন কান্নায় পরিণত হবে। মানুষ তাই মরতে চায় না। সর্বদা সে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা অবশ্যই তোমাদের কাছে উপস্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেই সত্তার কাছে, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছু সম্পর্কে অবগত। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন’ (জুম‘আ ৬২/৮)।

জন্মের পর নিশ্চিত একটা বিষয় হলো মৃত্যু। আমরা মুমিন আমরা বিশ্বাসী এক আল্লাহর একত্ববাদে কিন্তু সেই বিশ্বাস আমাদেরকে দ্বীনের পথে অবিচল রাখতে পারে না।আমরা জানি দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী, মৃত্যুর পর কেয়ামত দিবসে রবের সামনে দ-ায়মান হতে হবে সব বিষয়ে হিসাব দিতে হবে। সেই দিনের ভয়াবহতা পারে না আমাদেরকে ফজরের সালাতে জাগিয়ে তুলতে। ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করতে। আমরা দুনিয়ার ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি কিন্তু অনন্তজীবন যে জীবন সেটার জন্য কতটুকু সঞ্চয় আমাদের সেটা ভাবি না। আমরা সব জানি এবং বুজি কিন্তু পালন করার ব্যাপারে কোথায় যেন গাফেলতি হয়ে যায়।কুরআনে বলেন, ‘মুমিনদের জন্য কি এখনো সে সময় আসেনি যে তাদের হূদয় আল্লাহর স্মরণে বিগলিত হবে? তারা তাদের মতো যেন না হয়, যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। তাদের ওপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের বেশির ভাগ পাপাচারী।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ১৬)।

মুমিনের উচিত মৃত্যু আসার আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরন করা। দুনিয়ার চাকচিক্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলো না। রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের জানাযায় অংশগ্রহণ করতে বলেছেন এবং তাতে এক ক্বীরাত্ব তথা ওহোদ পাহাড়ের সম পরিমাণ নেকী ও দাফন শেষ করে ফিরে এলে তাতে দুই ক্বীরাত্ব সম পরিমাণ নেকীর কথা বলেছেন।(বুখারী হাদিস : ৪৭)। যাতে অন্যের জানাযা দেখে নিজের জানাযার কথা স্মরণ হয়। অন্যের কবরে শোয়ানো দেখে নিজের কবরের কথা মনে হয়।কবরের ভয়াবহতা স্মরন হয়। মৃত্যুকালীন অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ হয়। কেননা মৃত্যু যেকোন সময় এসে যেতে পারে। তাই মুমিনের সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা উচিত। এতে দুনিয়ার আসক্তি দূর করবে, ইমান বৃদ্ধি করে, আত্মশুদ্ধিতে এবং পরকালের জন্য পাথেয় খুঁজতে সাহায্য করবে।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শীতকাল আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত
পানির-ভারসাম্যতত্ত্ব, আসলনকল নির্ধারণী যন্ত্রের আবিষ্কারক মুসলিম মনীষী
তাকওয়া : মুমিন জীবনের অনুপম বৈশিষ্ট্য
রাসূল (সা.) এর জীবন-চরিত ও ইসলাম
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : ইসলামের দৃষ্টিকোণ
আরও

আরও পড়ুন

ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের

ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের

দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা

দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি

হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি

রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ

রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ

স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক

স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক

কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত

কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত

গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার

গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার

সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান

সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান

বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা

বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা

ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন

ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন

ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ

ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ

এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫

এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫

ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত

ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত

চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫

চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫

চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার

চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার

গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু

গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু

সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে

শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে